রবিবার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
সঙ্গীত অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র ‘কন্ঠ রাজ’ এন্ড্র কিশোরের আজ (৬ জুলাই মঙ্গলবার) প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। গত বছর এই দিনে তিনি অসু¯’ অব¯’ায় না ফেরার দেশে চলে যান। তার ছোট বেলা, কৈশর, শিক্ষা জীবন কেটেছে রাজশাহী বেতার কেন্দ্রের পশ্চিমে রাজশাহী খৃষ্টান মিশন হাসপাতাল কোয়াটারে। সঙ্গীত সম্পৃক্ত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। তালিম নেন সঙ্গীত দিক পাল ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বা”চুর কাছে সুরবানী সঙ্গীত বিদ্যালয়ে। সান্নিধ্য পান অন্যান্য ওস্তাদদেরর। পড়াশোনার পাশিপাশি সঙ্গীত চর্চাকালীন সময় স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে বড়দের সাথে তিনিও রাজশাহীর সকলকে উজ্জীবিত করতে ভূমিকা রাখতে থাকলেন।
ঢাকা থেকে আসা পাকিস্তানী সৈন্যদের আক্রমনে রাজশাহী জেলা সদরের প্রতিরোধ ভেঙ্গে গেলে পারিবারের সাথে সীমান্ত পার হয়ে গেলেন। সেখানে বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অনুষ্ঠানে গান গয়ে সকলের দৃষ্টি কাড়লেন। বিজয়ের পর দেশে ফিরে এসে দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে তার কন্ঠ দিয়ে সকলকে আবার উজ্জীবিত করতে থাকলেন। রাজশাহী বেতারের শিল্পি এন্ডু কিশোর কলেজ জীবন পার করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগে অধ্যায়নের সময় সকলের প্রিয়জন হয়ে গেলেন। শিক্ষক, কর্মচারী, সহপাঠি ও বন্ধুদের কাছের এ প্রিয় মানুষ ক্যাম্পাসের বাস চালক, টোকাই, বাদাম বিক্রেতা, চা বিক্রেতা সবার কাছে আপনজন হয়ে গেলেন। পুরো ক্যাম্পাস তার পদচারনায় মেতে উঠতো। বাইরে থেকে আসারা তাকে দেখার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতো।
তিনি তাদের আপন করে নিতেন। অনুষ্ঠানে তিনি গান গাইবেন এ কথা শুনে তার ভক্ত শুভাকাঙ্খিদের উপ¯ি’তিতে অনুষ্ঠান ¯’ল সড়গম হয়ে উঠতো। শিক্ষা জীবন শেষে নিজেকে কন্ঠশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। অনেক সুযোগ থাকলেও এই ধারাকেই গ্রহণ করলেন। অনেক প্লেব্যাক করেছেন। ঢাকায় থাকলেও তার প্রিয় রাজশাহীকে ভুলে যাননি। বহু অসহায় পরিবার, দু¯’ মানুষ তার কাছ থেকে সহযোগিত পেয়েছেন, যা কখনও প্রচারে আসেনি। এই প্রচার বিমূখ শিল্পী নিজের কথা তেমন একটা ভাবতেন না, ভাবতেন অন্যদের কথা। ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বা”চু স্মৃতি পরিষদ গঠন হওয়ার পর তিনি এই প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম দিক পালের দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা থেকে তিনি নানা পরামর্শ দিয়ে সকলকে ।
সহযোগিতা করতেন। সংগঠনটির কোন অনুষ্ঠানে স্বশরীরে তিনি উপ¯ি’ত থাকতেন। কোন সময় উপ¯ি’ত হতে না পারলেও খোঁজ খবর দিয়ে সহযোগিতা করছেন। তার জীবদ্দশাতেই নৃবাগী সঙ্গীত বিদ্যালয়, রাজশাহী ঘোড়ামারা রঙ্গ মঞ্চের তাদের একটি অনুষ্ঠানে তাকে ‘কন্ঠরাজ’ সম্মানে সম্মানীত করেন। অনেক অবদান রেখেও তার ভাগ্যে জাতীয় কোন সম্মান। অথচ তিনি শুধু রাজশাহী নয় উত্তর অঞ্চল তথা দেশের সঙ্গীত অঙ্গনের একন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তাকে শেষ বিদায় দেবার দিনে রাজশাহী মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তাকে সঙ্গীত অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র বলে শ্রদ্ধায় বলেন তাকে স্মরনীয় করে রাখতে উদ্দ্যোগ নেয়া হবে। তাকে নিয়ে স্মৃতি চারণে শিক্ষাবীদ দিপক দাস বলেন ‘বন্ধু এন্ড্রু কিশোর এন্ড্রু কিশোরই এটাই তার পরিচয়’। সমাজ চিন্তাবীদ আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন-‘এন্ড্রু কিশোরের সাথে দেখা হলে নানা বিষয় নিয়ে কথা হলেও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিষয়টি তাতে প্রাধান্য পেতো। একদিন এন্ড্রু কিশোর তাকে বলেন শিল্পীদের শেষ জীবনা খুবই কষ্টের, এটাই বাস্তব”। তাকে স্মারণীয় করে রাখতে বাঙ্গালি সাংস্কৃতিক ধারায় তার নামে কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে।
নাট্য ব্যক্তিত্ব আব্দুর রশিদ বলেন-‘এন্ড্রু কিশোরকে তিনি ছোট থেকে কাছে পেয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে বড়দের সাথে সে গান গেয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। ঋতিক ঘটক ফ্লিম সোসাইটির সভাপতি ডা. এফ এম এ জাহিদ বলেন-‘এন্ড্রু কিশোর ছিলেন সঙ্গীত আকাশের ধ্রুবতারা’। তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গীত শিল্পী কাজী বা”চু বলেন-“তার সাথে বহু সময় কেটেছে। কখনও সে ভাই, কখনও বন্ধু, কখনও স্বজন। তাকে নিয়ে আমার সেই সব দিনগুলি এখন স্মৃতি”। ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বা”চু স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদকসঙ্গীত শিল্পী মাইনুল ইসলাম খোকন বলেন-‘এন্ড্রু কিশোরের সাথে আমার শৈশব থেকে পরিচয়, এ মানুষটিকে বাইরে থেকে দেখলে বুঝা যেত না তিনি কটা সহজ সরল মানুষ ছিলেন। একেবারে প্রাচার বিমূখ আমাদের কিশোর দা ছিলেন নিঅহংকারী ব্যক্তিত্ব। খুব সহজেই অন্যকে আপন করে নিতে পারতেন। তার সাথে অনেক অনুষ্ঠান করেছি। তিনি মাছ ধরতে পছন্দ করতেন। খাবরের মধ্যে প্রিয় খাবার ছিল খিচুড়ি। তাকে নিয়ে অল্প কথায় সবকিছু বলা সম্ভব নয়’। নাট্য ব্যক্তিত্ব মাহমুদ সরকার নান্নু বলেন-“ছোট থেকে তিনি এন্ড্রু কিশোরকে দেখেছেন পাশে পেয়েছেন। এন্ড্রু কিশোর একজন ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব ছিলেন”।
রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন-“এন্ড্রু কিশোর একটি গর্বিত নাম। তিনি আমাদের জন্য অবদান রেখে গেলেন। কিš‘ আমরা তাকে কতটুকু মূল্যায়ন করেছি?”। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিতায় কুমার বলেন-“এন্ড্রু কিশোর এখন স্মৃতি। তিনি যা দিয়ে গেলেন, যা করে গেছেন তা অপরিসীম। তাকে স্মরণীয় করে রাখতে উদ্যোগ প্রয়োজন”। ড্রিম মেকিং প্রেডাকশনের সাহরিয়ার চয়ন বলেন “তার প্রতি হৃদয়ের গভীর ¯’ল থেকে শ্রদ্ধা। তিনি বেঁচে থাকবেন মানুষের ভালবাস আর কন্ঠে”। চলচিত্র নির্মাতা লিটন বলেন-“কিশোর দা যা করে গেছেন তা অনেক। আমরা তাঁকে কতটুকু মনে রাখবো এটাই বড় বিষয়”। সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব সাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন “কিশোর দা ছিলেন অন্যরক এক মানুষ। তাকে দেখেছি কখনও মঞ্চের শিল্পী। কখনও অনুষ্ঠানের দর্শক। শ্রতারা গান গাইবার অনুরোধ করলে কথা রাখার চেষ্টা করতেন। দেখেছি অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যদের সঙ্গীত চর্চার বিষয়ে উপদেশ পরামর্শ দিতে। শুধু অন্যকে দিয়ে গেলেন নিজের কথা ভাবলেন না। তাকে স্মরণীয় করে রাখতে সত্যিকার বাঙ্গালি সাংস্কৃতিক ধারায় তার নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেতে পারে। এটাই হবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও তার অবদানকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা”। কন্ঠরাজ এন্ড্রু কিশোরের খুব কাছের কন্ঠ শিল্পী নৃবাগী সঙ্গীত বিদ্যালয়ের পরিচালক কাজী মন্টু বলেন-“আমাদের প্রিয় কন্ঠরাজ সঙ্গীত আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র এন্ড্রু কিশোরকে জাতীয়ভাবে সম্মান দিতে পারেনি। এটি খুবই কষ্টের। তারকাছ থেকে যে পরামর্শ, উপদেশ, তালিম পেয়েছি তা ধরে রেখে এগু”িছ। আর আমার ছাত্র ছাত্রীদের আদর্শ শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে তার দেয়া, উপদেশ পরামর্শমত এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। এই মানুষটি আমাদের জন্য যা করেছেন তা ভুলবার নয়। কিš‘ আমরাই হইতো তাকে ভুলে যাব। আমার দাবী তাকে জাতীয় সম্মানে সম্মানীত করা হউক”।
নৃবাগীর উপদেষ্টা ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন-“এই বিশাল হৃদয়ের শিল্পীর যে ভালবাসা, অবদান তা সকলের মাঝে স্মরণীয় করে রাখতে উদ্যোগ প্রয়োজন”। সঙ্গীত শিল্পী যতন কুমার পাল বলেন-“এন্ড্রু কিশোর কে দাদার মতো দেখতাম। তিনি আজ নেই। তার অবদান আমরা কতটুকু মনে রেখেছি? নৃবাগীকে ধন্যবাদ তারা এন্ড্রু কিশোর কে তার জিবর্দ্দশায় ‘কন্ঠরাজ’ সম্মানে সম্মানীত করেছেন”। আবৃত্তিকার হৃদয় রনি বলেন-“তার প্রতি অজশ্র শ্রদ্ধা রেখে শুধু বলবো এন্ড্রু কিশোর তুমি সন্ধ্যা আকাশে তারার মতো জলবে”। সঙ্গীত শিল্পী রনক হাসান বলেন-“কিশোর দা আমার ছোটবেলার আইডল। তার গানগুলি অবাক হয়ে শুনতাম আর ভাবতাম তার মতো যদি গান গাইতে পারতাম। সত্যি সত্যি তার গান শুনে শিখে আজ আমি বলতে পারি আমি একজন সঙ্গীত শিল্পী। কন্ঠরাজ এন্ড্রুকিশোরকে জাতীয় সম্মানে সম্মানীত এবং তার নামে রাজশাহীতে বাঙ্গালি সাংস্কৃতির ধারায় একটি সঙ্গীত একাডেমির দাবী করছি। পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত বিভাগে তাকে স্মরণীয় করে রাখতে উদ্যোগ নেয়া হউক”।
নিরাপদ সরক চাই রাজশাহী জেলা সভাপতি তৌফিক হাসান টিটু বলেন “এন্ডুকিশোর ভালো মনের মানুষ ছিলেন আমাদের সংগঠনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে তার নিবীর সম্পর্ক ছিল তার অভিনিত ছবিতে এন্ডুকিশোর প্লেব্যাক করেছেন।এন্ডুকিশোরকে স্মরনীয় করে রাখতে সকলের মত আমারও দাবি উৎদোগ নেয়া হোক” অভিনয় শিল্পি অরণ্য কুসুম বলেন “ এন্ডুকিশোর একটি প্রতিষ্ঠন তিনি সবার ছিলেন। তার অবদান কে স্মরণীয় কওে রাখতে সু¯’ ধারা পতিষ্ঠান প্রয়োজন। সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সহোযোগিতা দেবো”
সঙ্গীত অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র ‘কন্ঠ রাজ’ এন্ডু কিশোরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
ওয়ালিউর রহমান বাবু, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর ,উত্তরবঙ্গ টেলিভিশন।
Leave a Reply