মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:২২ অপরাহ্ন
মহাত্মা গান্ধির ১৫৩তম জন্ম জয়ন্তীতে
আহসানগঞ্জ গান্ধি আশ্রমের কিছু কথা
-ওয়ালিউর রহমান বাবু
“আমার মুক্তি সর্বজনের প্রাণের মাঝে”
১৯২২ সাল। অবিভক্ত বাংলায় উত্তর বাংলার চলন বিল, আশপাশ এবং আত্রাইসহ বিভিন্ন স্থানে বন্যায়
আক্রান্ত জনগোষ্ঠিকে রক্ষায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ব্রটিশ খাদাও আন্দোলন ও স্বদেশী
আন্দোলনের পুরোধা প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারেষ্টার মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি এবং প্রখ্যাত
বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়কে ভূমিকা রাখতে আহŸান জানান। ২ অক্টোবর রবিবার
মহত্মা গান্ধির ১৫৩ তম জন্ম জয়ন্তী ছিল।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আহŸানে মহাত্মা গান্ধি ও বিজ্ঞানী আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
সেসময় বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি গঠন করেন। এর একটি শাখা আত্রাইয়ে গঠিত হয়। নেতাজী
সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে কার্যক্রম চলতে থাকে। স্বদেশী আন্দোলন ও বিদেশী পন্য বর্জনের
ডাক বেগবান হয়। আচার্য্য বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কার্যক্রম এগিয়ে নিতে ভূমিকা
রাখেন। কোলকাতা মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র নিরেন্দ্র চন্দ্র দত্ত পড়া বন্ধ করে স্বদেশী
আন্দোলনে যোগ দিয়ে আত্রাই (আহসানগঞ্জ)-এ চলে এসে এ প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদকের
দায়িত্ব নেন। কয়েক বার কারাবন্ধী হয়েও তিনি থেমে থাকেন নি। মহাত্মা গান্ধি ও আচার্য্য
বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এখানে এসে কর্মকান্ডকে বেগবান করেন। পরবর্তীতে তাঁরা বহুবার
এখানে এসে অব¯’ান করেন। বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এ অঞ্চলে এসে এ প্রতিষ্ঠান কে
সহযোগিতা করেন।
বঙ্গীয় রিলিফ কমিটির তত্ত¡াবধানে বিদেশী পণ্য বর্জন ও স্বদেশী আন্দোলনকে জাগরিত করতে
স্বদেশী পদ্ধতিতে চিকিৎসা বিভাগ, প্রাথমিক ও বয়স্ক শিক্ষা বিভাগ, ঘানি বিভাগ, পশু পালন
বিভাগ, গো প্রজনন বিভাগ, ঢেঁকি বিভাগ, মৌমাছি চাষ বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রাখে। মহাত্মা গান্ধি এ প্রতিষ্ঠানে অব¯’ান নিয়ে জনগনকে স্বদেশী আন্দোলন ও ব্রিটিশ
খেদাও আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেন। পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কৃষক আন্দোলন ও
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকায় পাকিন্তান সরকার এ প্রতিষ্ঠানকে সুনজরে দেখেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়
পাকিন্তানি সৈন্যরা মহাত্মা গান্ধির অব¯’ান ¯’ল সহ পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দেয়।
বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটি পুন:গঠিত হয়। আত্রাই (আহসানগঞ্জ) বঙ্গীয়
রিলিফ কমিটি গান্ধি আশ্রমে রূপান্তর হয়ে সবার হৃদয়ে ¯’ান করে নেয়। সরকারী নিবন্ধন পাওয়া
সার্বজনীন এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ১৩ সদস্যের কমিটি ও ১০ সদস্যের উপদেষ্টা মন্ডলী
পরিচালনায় পরিচালিত হ”েছ। ৯ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি জঙ্গিবাদ,
সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে দক্ষিণ এশিয়ার বন্ধনকে
শক্তিশালী করেছে।
নওগাঁ জেলার আত্রাই (আহসানগঞ্জ) রেল ষ্টেশনের পূর্ব পাশে অব¯ি’ত গান্ধি আশ্রমের আরেক
প্রাণপুরুষ এই প্রতিষ্ঠানের সহকারী চিকিৎসক, সাধারণ সম্পাদক সমাজসেবী ডা.
নিরাঞ্জন দাস নিজেকে এখানে সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ত রেখেছেন। এখানকার কর্মকান্ড অব্যহত
রাখতে তিনি নি:স্বার্থ ভাবে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। স্বদেশী আন্দোলন,
ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ইতিহাসের
সাক্ষী [তথ্য সূত্র: নওগাঁ জেলার আত্রাই (আহসানগঞ্জ) গান্ধি আশ্রমের সহকারী চিকিৎসক ও
সাধারণ সম্পাদক ডা. নিরঞ্জন দাস]
ওয়ালিউর রহমান বাবু
মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রাহক, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজশাহী।
Leave a Reply