মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন
অঙ্কিত বাগচী
বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওয়া বেশি ভালো খবর। করোনার মধ্যে থেকে হঠাৎ যে খবর ব্রেক করল সেটা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা। এরকম খবর এলে যে কোনো নিউজ চ্যানেলের বিরাট সুবিধা হয়, কেউ কেউ বোঝেন যে সঙ্গে সঙ্গে অনেক লোকজনকে ফোন করা, অনেক মানুষের বাইট ও আরো নতুন নতুন এঙ্গেল খুঁজে চলার পক্রিয়া চলে।
মূল কথা হল একটা খবরকে লাগাতার ময়নাতদন্ত করে গেলে কিছু না কিছু পাওয়া যাবে।খবরের ব্যবসার প্রভাব সোশ্যাল মিডিয়ায় পরতে থাকে। কোনো একটা ঘটনা ঘটলেই বিভিন্ন পেজ, ইউটিউব চ্যানেল লেগে পরে কন্টেন্ট রেডি করতে। সুশান্ত মারা যাওয়ার খবরটা পাওয়ার এক ঘন্টার মধ্যে দেখি ইউটিউবারদের নোটিফিকেশন এসে গেছে নতুন ভিডিও ।
আমরা কি সবাই মর্মাহত ? একেবারেই না । আমরা প্রতি মুহূর্তে শকুনের মত বিভিন্ন ঘটনার জন্য অপেক্ষা করে আছি। ঘটনা ঘটলেই সেটাকে নিয়ে ভিডিও, গ্রাফিক্স ইত্যাদি শুরু হয়ে যায়। এটা কি কোনো শ্রদ্ধার্ঘ্য নাকি ভিউ পাওয়ার দৌড়। সোশ্যাল মিডিয়াকে প্রথম দিকে আমরা যেভাবে দেখতাম আর আজ যেভাবে দেখছি তার মধ্যে বিস্তর তফাৎ। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে বিজ্ঞাপন মুড়ে ফেলেছে এই সব মাধ্যমগুলিকে তাতে যে কোনো বিষয়ে এনগেজমেন্ট তৈরি মূল লক্ষ হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটা মুহূর্তে সকলেই চাইছে একটা ক্লিক, একটা এনগেজমেন্ট। ফেসবুকে দেখেছি অনেক হেল্পলাইন নাম্বার শেয়ার হয় বিভিন্ন সময়।সবাই লিখে রাখেন যে সমস্যা হলে তাকে জানাতে কিন্তু দুঃসময়ে কেউ থাকেনা। সেই সময়, ধৈর্য্য কি সত্যি আছে আমাদের? যা আছে তা সবই চট জলদি মন্তব্য ।
আমাদের নিজেদের যা ধারণা তার নিরিখে আরেকজনকে দেখা। আজ সারাদিন ফেসবুকে সবাই আলোচনা বসিয়েছেন আত্মহত্যা ঠিক না ভুল, অনেকে তার সিনেমার ডায়লগ কোট করেও প্রশ্ন করছেন কেন তিনি হেরে গেলেন। এই উত্তর আমি আপনি । হ্যাঁ এই আমি আপনি কখনও কোনোদিন কাছের বন্ধুর মন খারাপটাকেও গুরুত্ব দি নি। বাবা-মা, পরিবার -পরিজন কোনোদিন মানসিক অবসাদকে গুরুত্ব দেয়না, কখনও বলতে গেলেও ও কিছু নয়, সেরে যাবে এসব বলে দায়িত্ব সাড়ে।
বন্ধুরা যারা পাত্তা দেয় তারা নিজের মতামত চাপিয়ে দেয়, নিজের কোনো একটা ঘটনাকে বাড়িয়ে একটা ওভারকামিং চ্যালেঞ্জ মার্কা গল্প শুনিয়ে ফোন রাখে। যিনি আত্মহত্যা করবেন ভাবছিলেন তিনি জীবনের প্রতি আরো বিতৃষ্ণা নিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আমি আপনি যদি কখনও গভীরভাবে ভেবে দেখি তাহলে দেখব প্রতি নিয়ত ইয়ার্কি ঠাট্টার মধ্যে আমরা কোনো বন্ধু মানুষের বডি, কালার সেম করে চলে যাই, টিচার অধ্যাপকরা কিসসু হবেনা বলে পরের চ্যাপ্টারে এগোয়, বাবা মায়েরা কমপ্লেন বক্স সাজিয়ে আত্মীয় পরিজনদের প্লেটে সার্ভ করে, বন্ধুরা ফেসবুকে রিপ স্টেটাস দেয়।
আজকের সোশ্যাল মিডিয়া আরেকজনকে হেয় করার যে নতুন শিল্পের প্রবর্তন ঘটিয়ে ফেলেছে এবং সে বাণিজ্যের মধ্যে থেকে প্রতিনিয়ত যে বিষ উৎপাদন চলছে তার যে শেষ নেই তা সহজেই বোধগম্য হয়। এই অনলাইন বাণিজ্য মেলায় অসম্মান, মৃত্যু, যন্ত্রণা, আবেগকে সুন্দর প্যাকেজ করে মিনিটের ফুটেজ তৈরি করে যে বিক্রি বাটা চলতে থাকে সেটুকু সময় যদি নিজের কোনো বন্ধুর মন খারাপের দিনে দেওয়া যায় তাহলে আর জীবন বাঁচানোর হেল্পলাইন নাম্বার শেয়ার করার প্রয়োজন পড়েনা।
লেখক : ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কিউরেটর, প্রোগ্রামার, কনসালটেন্ট।
Leave a Reply