বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন
চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ও নির্মাতার স্বাধীনতার লড়াই সারা বিশ্বের দরবারের চলচ্চিত্র গোটা পৃথিবী জুড়ে যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, ঠিক তখন-ই এ দেশের সেন্সর বোর্ড আমাদের চলচ্চিত্র দৃশ্যর নববধূ ব্লাউজের নিচে কি ধরনের ব্রা পরেছে তা দেখা নিয়ে ব্যস্ত। সিনেমায় এই ‘ব্রা’ দেখাবার জন্য আমাদের সেন্সরশিপ রয়েছে। সেটা যতটাই যুক্তি হোক না কেন দৃশ্যের জন্য।
হাবিবুর রহমান
এখন পর্যন্ত যতটুকু বললাম এর জন্য কোন লেখার সেন্সরশিপ আছে কি না বা কেটে বাদ দিতে হবে কিনা, আমি জানি না। তবে এটা বলতে পারা বা লিখতে পারা আমার স্বাধীনতা।
ঠিক তেমনি আমি যেটা বলতে চাই বা আমার সিনেমায় রাষ্ট্রনীতি, সমাজ ব্যাবস্থা, জীবন-জীবিকা, ভালোবাসা বা যৌনতা এগুলো জীবন ব্যবস্থার মত সিনেমাতেও একটি গল্প তৈরি করার জন্য শতকরা ৯০ ভাগ এই বিষয় গুলো উঠে আসে প্রায় প্রতিটি সিনেমায় ।
এবার একটু ঝেঁড়ে কাশি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আইন নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে একপ্রকার মতাদর্শে চলছে সেই সাথে এক প্রকার স্বাধীন শীল্পকে শর্তের বেড়াজাল পড়িয়ে আটকে দেবার চেষ্টা । এ বিষয় আপনাকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইন ২০১৯ এর খসড়া পাঠ করতে হবে তাহলেই বুঝতে পারবেন বাংলাদেশের নির্মাতাগন ও চলচ্চিত্রকর্মী কিংবা আপনি নিজেই কতখানি বিপদে ও পরাধীনতা অর্জন করতে যাচ্ছে।
এই চলচ্চিত্র এর সার্টিফিশেন আইনটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ও সৃজনশীলতার দমন মূলক আইন । আপনি না চাইলেও আটকা পরে যাবেন শর্তের বেড়াজালে, মধ্যে কথা হলো আপনাকে এই আইন রুখতে হলে নিজের থেকে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে অবশ্যই তা সঠিক ভাবে বুঝে শুনে ।
এ ব্যাপারে আরও স্পষ্ট ধারনা মিলবে বেলায়াত হোসেন মামুন ভাইয়ের লেখা “বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলন ও ইশতেহার” নামক বইটি পাঠ করলে।
বইটিতে তিনি খুব সহজভাবে বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাস থেকে বর্তমানের সকল পরিস্থিতি বিশ্লেষন করেছেন। সেই জন্য বইটি পাঠ করলে বুঝতে পারবেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কি ধরনের বিপাকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ।
এক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গবদ্ধ হয়ে এ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন আইনটি রুখতে হবে। যা কারো একার পক্ষে সম্ভব নয় আমাদের সকল চলচ্চিত্র কর্মী ও নির্মাতাদের একত্রিত হয়ে লড়তে হবে। না হলে আপনার গল্প বলার বা দেখাবার স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলতে হবে। যেমনটা বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের কিছু ওয়েব কন্টেন্ট নিয়ে আইনি মামলা তর্ক-বিতর্ক চলছে অশ্লীলতারে বেড়াজাল পরিয়ে সিনেমাকে কর্তন করে প্রতিবন্ধী বানিয়ে দেয়া হচ্ছে ।
আপনার গল্পের জন্য গভীরতা বোঝার ক্ষেত্রে হোক না সে দৃশ্যটি প্রয়োজন তাও বাকি থাকবে না। বিশ্বের সিনেমার দরবার যখন পুরোপুরি (১৮+) এডাল্ট আমাদের সিনেমাকে ইচ্ছে করে ১০/১২ বছরের কিশোরির মত প্রতিবন্ধী বানিয়ে রাখা হয়েছে সেন্সরশিপের শর্তে। যা এভাবে চলতে থাকলে আর কবে আমাদের চলচ্চিত্র আলোর মুখ দেখবে তা অনিশ্চিত। এক পর্যায় এমন হতে পারে ঋত্বিক ঘটকের সিনেমায় দেশ ভাগের সে কি যন্ত্রনা তা আমরা দেখেছি। এবার বাংলাদেশের সিনেমার সেন্সরশিপের যন্ত্রনায় অন্য দেশে সিনেমা ও সৃজনশীলতা নিয়ে পালাতে হবে।
আমাদের আগামী প্রজন্ম আমাদের পরিস্থিতিও সিনেমায় দেখবে। আফসোস করবে। তবে আমার মনে হয় আমাদের এক সাথে রুখে দাঁড়াবার সময় এসে গেছে।
স্বাধীনতা চাই দেখাবার। জয় হোক বাংলা সিনেমার।
লেখক : চলচ্চিত্র নির্মাতা
Leave a Reply