বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী নগর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কাটাখালী পৌরসভা। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় এই দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার পর পৌর এলাকায় ঢোকার আগে যাত্রীদের উদ্দেশে চালক বলে উঠলেন, ‘সবাই মাস্কটা পরে নেন। নইলে সামনে আগানো যাবে না।’ পৌরসভা বাজারে অটোরিকশা থামতেই শোনা গেল মাইকিং, বলা হচ্ছে, ‘মাস্ক ছাড়া পৌরসভায় ঢোকা যাবে না।’ বাজারে নেমে দেখা গেল, প্রায় সবার মুখেই মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলছেন তাঁরা।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এমন নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার পৌর এলাকায় আরোপ করা হয়েছে বিভিন্ন বিধিনিষেধ। সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন পয়েন্টে রাখা হয়েছে হাত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা। বাইরে থেকে কেউ এলাকায় এলে পরিবারের জন্য এক মাসের ত্রাণ দিয়ে তাঁকে বাড়িতে রাখা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জফেরত এ রকম ১০ পরিবারকে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলে ঈদের পর থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার ভারতীয় ধরন মিলেছে। রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের বেশি। মহানগরের লাগোয়া হওয়ায় রাজশাহী নগরের পরেই সর্বাধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে পবা উপজেলায়। যদিও এই উপজেলারই একটি পৌরসভা কাটাখালী শুরু থেকেই করোনার সংক্রমণ অনেক কম। এর পেছনে রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ও এলাকাবাসীর সচেতনতা। করোনার আরেক ঢেউ মোকাবিলায় পৌর এলাকায় বর্তমানে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন সবাই।
পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় গত দেড় বছরে ৩৫০ জন (রোববার সকাল পর্যন্ত) আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৯ জন। জনবহুল হওয়া সত্ত্বেও কাটাখালী পৌর এলাকায় দেড় বছরে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩০ জন রোগী। আর এ বছর আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে পাঁচজন সুস্থ হয়েছেন। চারজন চিকিৎসাধীন। আর এ পর্যন্ত একজন মারা গেছেন।
গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটাখালী পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে অন্তত ১৬টি জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কার্যক্রমের বুথ দেখা গেছে। শুধু বাজারে বসানো হয়েছে ছয়টি বুথ। বাজারে ঢুকতে হচ্ছে হাত জীবাণুমুক্ত করে। বাজারের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল ক্রেতা–বিক্রেতা সবার মুখেই মাস্ক। সেখানে মাংসবিক্রেতা আরশাদ আলী জানালেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার ভারতীয় ধরন এসেছে। সেই করোনা যাতে তাঁদের এলাকায় না আসে, সে জন্য এই বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। বাজারের সব ধরনের ব্যবসায়ীকে বলা হয়েছে মাস্ক ছাড়া কোনো জিনিস ‘বেচবও না, নিজেরাও মাস্ক পরব।’ সেখানে থাকা পৌরসভার মাসকাটাদীঘি এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, পৌরসভায় কেউ মাস্ক ছাড়া ঢুকতেই পারেন না। প্রতিটি মোড়ে মেয়রের উদ্যোগে মাস্ক আর স্যানিটাইজার দেওয়া হচ্ছে। কিছু সময় পরপর পৌর কমিউনিটি পুলিশ মাইকিং করছে।
কাটাখালীর পৌরসভার মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের নিচে গলিটা সবচেয়ে জনবহুল এলাকা। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মোড়ের সামনে পৌরসভার একটি মাস্ক আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের বুথ বসানো হয়েছে। সেখান থেকে বাজারের ভেতরে ঢোকা সবাইকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার করানো হচ্ছে। যাঁদের মুখে মাস্ক নেই, কিংবা মাস্ক ঠিকমতো পরেননি, তাঁদের জেরার মুখে ফেলা হচ্ছে। এখানকার ফলবিক্রেতা মো. সজীব মিয়া বললেন, এলাকার সবার সঙ্গে কথা বলে মেয়র সবকিছু করার চেষ্টা করেন। এ জন্য সবাই তাঁর কথা শুনেন। তিনি করোনার কারণে ভুক্তভোগীদের তালিকা করে খাবার পৌঁছে দেন। এ ছাড়া তাঁর কয়েকটি ফোন নম্বর এলাকার সবার কাছে রয়েছে। কেউ খাদ্যের জন্য সমস্যায় পড়লে তাঁকে সরাসরি ফোন করে খাদ্যসহায়তা পেয়ে থাকেন।
Leave a Reply