শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম: অহিংস অগ্নিযাত্রা
আহ্বায়ক: অপরাজিতা সংগীতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অ্যাক্টিভিস্ট
সংগঠক: তৃষিয়া নাশতারান, ডিজাইনার ও ফোরসাইট বিশেষজ্ঞ
গত ১৮ মে-তে নরসিংদী স্টেশনে একজন নারী পোশাকের কারণে কুৎসিত আক্রমণ ও সহিংসতার শিকার হন। আমরা তার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। মেয়েটির সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ২৭ মে আমরা ২০ জন গেছিলাম নরসিংদী স্টেশনে৷ আমরা কোনো মিছিল বা সমাবেশ করিনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে চেয়েছি, বুঝতে চেয়েছি। আমরা জায়গাটা এবং সেখানকার মানুষগুলোকে দেখতে গেছি, তাদের সাথে মানবিক যোগাযোগ স্থাপন করতে গেছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো শান্তিপূর্ণভাবে জনপরিসরে শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতার জায়গা রিক্লেইম করা। আমাদের বৈচিত্র্যময় শারীরিক উপস্থিতিই আমাদের বক্তব্য।
নরসিংদী রেল স্টেশনের সেই যৌন হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত নারীকে জামিন শুনানির সময় আদালত ওই তরুণীর পোশাককে দৃষ্টিকটু বলে নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করেছেন। জামিনের পক্ষের আইনজীবী মো. কামাল হোসেন গণমাধ্যমের কাছে জানান যে, ‘আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গুলশান–বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এ ধরনের পোশাক পরে রাস্তায় বের হয় না। সেখানে গ্রামের মতো একটি জায়গায় পাবলিক প্লেসে এ রকম পোশাক পরা স্বাধীনতা হতে পারে না। যেমন খুশি তেমন পোশাকের নামে আমাদের সোসাইটির কালচারকে ধ্বংস করতে পারে না। ওই মেয়ে যে ধরনের পোশাক পরিহিত ছিল সেটা আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে বেমানান। যে কারণেই প্রতিবাদের শিকার হয়েছিল।’
ওই তরুণীকে হেনস্তার প্রসঙ্গ নিয়ে হাইকোর্ট প্রশ্ন রেখেছেন, সভ্য দেশে এমন পোশাক পরে রেলস্টেশনে যাওয়া যায় কি না। আদালত বলেছেন, ‘(ওই তরুণী) প্ল্যাটফর্মে আপত্তিকর অবস্থায় ছিল, সিডিতে দেখা যায়। এটি আপনার অধিকার? পোশাকের অধিকার?’ পোশকের জন্য নরসিংদী রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে করা মামলায় এক আসামির জামিন আবেদনের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে হাইকোর্ট এ প্রশ্ন রাখেন। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ১৬ অগাস্ট (মঙ্গলবার) জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি নিয়ে আদালত মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলাকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন।
জামিন আবেদন শুনানিতে তরুণীর হেনস্তার শিকার হওয়ার পর ঢাকা থেকে প্রতিবাদ করতে যাওয়া ব্যক্তিদের, অর্থাৎ আমাদের পোশাক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে উচ্চ আদালতের বক্তব্য যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে, তা যদি সত্য হয় তবে তা নারীর সমানাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার মানদণ্ড এবং বর্তমান সরকারের নারীর ক্ষমতায়ন-সংক্রান্ত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা ছাড়া এ ধরনের মন্তব্য প্রতিক্রিয়াশীলদের উদ্বুদ্ধ করবে।
অন্যদিকে, নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে হেনস্তার শিকার তরুণীর পোশাক নিয়ে এ সংক্রান্ত মামলার আদেশে কিছুই লেখা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (১৭ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এসময় হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা (হাইকোর্ট) তো আদেশে পোশাক নিয়ে কিছুই লিখিনি, আমরা ভিডিও দেখে আইনজীবীদের কাছে শুধু জানতে চেয়েছি। ভিডিও দেখে রাষ্ট্রেপক্ষের কাছে জানতে চেয়েছি, এমন ড্রেস পরে এমন গ্রাম এলাকায় যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ কিনা?’ পরে আদালত সম্পর্কে ভিন্ন রকম মন্তব্য যদি কেউ করে থাকেন, তাহলে তাদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য উপস্থাপনে আইনজীবীদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
আদালতে আমরা উপস্থিত ছিলাম না। হাইকোর্টের আদেশে যদি পোশাক নিয়ে কিছু লেখা নাও হয়, পোশাক নিয়ে প্রশ্ন আদৌ তোলা যেতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন আমাদের। একজন নারী কী পোশাক পরলেন সেটা আদৌ কেন হাইকোর্টে আলোচ্য বিষয় হবে?
আমরা তাই গতবারের মতোই স্বাধীন পোশাকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান জানাতে বের হয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য একই। এবারও এটি কোনো মিছিল বা সমাবেশ নয়। আমাদের স্বাধীন অবস্থানই আমাদের প্রতিবাদ।
Leave a Reply